সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩১ অপরাহ্ন
ইয়াছিন আরাফাত আশিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে, কালের খবর : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন সন্তানের জননীর আত্মহত্যার অপরাধে স্বামী সাদ্দাম হোসেন (৩২) সহ ৫ জনকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় নিহতের বাবা আবু তালেব একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের (নোয়াজের বাড়ি) এলাকায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল বিকাল আনুমানিক সাড়ে পাঁচ ঘটিকার সময় আবু তালেব’র মেয়ে মাসু বেগম (২৭) তার স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটি করে ঘরে থাকা কাঠের ফার্নিচারের বার্নিশের (তারফিন) জাতিয় বিষ খেয়ে ফেলে। পরে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসু বেগম মারা যায়। পরে নিহতের পিতা আবু তালেব (৭১) বাদী হয়ে স্বামী সাদ্দাম হোসেন(৩২), সাচ্চু মিয়া(৪৫),শারফিন মিয়া(৪২), ফাতেমা বেগম (৪০) ও সালমা বেগম সহ ৫ জনকে আসামি করে গত ৭ ই এপ্রিল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
নিহতের বাবা আবু তালেব মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ১২/১৩ বছর আগে সাদ্দাম হোসেনের সাথে আমার মেয়ে মাসু বেগমের বিয়ে হয় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিয়ের পর আমর মেয়ের মাসুর গর্ভ থেকে ৩ টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ছেলে নাম রাহাদ (১০), মেজো ছেলের নাম রায়হান (৮) ও ছোট ছেলের নাম আরিয়ান আড়াই বছর। বিয়ের পর থেকে আমার মেয়েকে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। কয়েক বছর আগে সাদ্দাম গোপনে আরেকটি বিয়ে করে বিদেশে চলে যায়। বিদেশে যাওয়ার পর থেকে ঠিক ভাবে আমার মেয়েও আমার নাতিদের ভরনপোষণ করতো না সাদ্দাম হোসেন। সংসারের অভাবের কারনে আমার মেয়ের তার নিজব্যবহারের দের ভরি স্বর্ণ বন্ধক রেখে ৭৫ হাজার টাকা এনে মাসুর সংসারে খরচ করে। পরে তার স্বামী বিদেশ থেকে আসার পরে আমার মেয়েকে সাদ্দাম হোসেন শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে স্বর্নের জন্য। বিষয়টি আমি আমার মেয়ের কাজ থেকে জানতে পেরে, তারপর আমি আমার মেয়ের সুখের জন্য আমার টাকা দিয়ে বন্দুক রাখা স্বর্নের গয়না গুলো ছুটাইয়া দেই। তখন সাদ্দাম তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে স্বর্ণ গয়না গুলো দিয়ে দেয় এবং প্রায়ই ভিডিও কল দিয়ে আমার মেয়ের সামনে সাদ্দাম নারীর সাথে কথা বলে। এনিয়ে তাদের মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়েছে, এই সূত্রধরে সাদ্দাম আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নিহত মাসু বেগম’র এর দ্বিতীয় ছেলে রায়হান (৮) স্থানীয় মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের ছাত্র বলেন, আমার মা’কে প্রায়ই আমার বাবা বকাবকি ও মারধোর করতো।
নিহতের ভাই ইয়ার হোসেন বলেন, আমার বোনকে তারা মেরে ফেলছে। আমরা থানায় মামলা দায়ের করলে সাদ্দাম হোসেনের বাড়ির মালামাল সরিয়ে ফেলেছেও তারা পালিয়েছে। সাবেক ইউপি সদস্য হাবিব মিয়া বলেন, আমি চাই এই ঘটনার বিচার হউক, মেয়েটাকে নিয়ে কয়েকবার সাদ্দামের সাথে দরবার হইছে আমি শুনেছি, আমি চাই এইটার সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষে বিচার হউক, কম কষ্টে মেয়েটা তিনটা বাচ্চা রেখে আত্মহত্যা করেনায়।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, নিহতের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, আমরা তদন্ত করছি তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।